শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমাদের দেশের অন্যতম দক্ষ জনশক্তি হচ্ছে গাড়িচালকরা। তাদের নিবন্ধিত লাইসেন্স রয়েছে। পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে একজন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পরই তিনি রাস্তায় নামতে পারেন। তাহলে এই দক্ষ মানুষদের যুগের পর যুগ এত অমানবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় কেন-এটা আমাদের খুঁজে দেখা দরকার। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ঢাকা জেলা ট্যাক্সি, ট্যাক্সিকার ও অটোরিকশা চালক শ্রমিক ইউনিয়ন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। চালকদের উদ্দেশ্যে তিনটি পরামর্শ তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথমত, চালকদের নিজেদেরকে নিয়োগকারীর (মালিক নয়) সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক সমান অংশীদার হিসেবে দেখতে হবে। এই সম্পর্কটি ‘মালিক-শ্রমিক’ নয়, বরং ‘চুক্তিভিত্তিক অংশীদারিত্ব’-এর হওয়া উচিত। যেখানে উভয়ের অধিকার ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট থাকবে। এর জন্য নিজেদের মধ্যে বোধ ও সাহস তৈরি করা জরুরি যে, আমরাও দেশের একজন দক্ষ জনশক্তির অংশ। দ্বিতীয়ত, সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, মৌলিক দাবিগুলো যেমন নিয়োগপত্র, ন্যায্য মজুরি-যা বাজারের মানদণ্ড নয় বরং যৌক্তিক আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। সেটা আদায়ে চালকদের নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করা দলগুলোর সঙ্গে কর্মসূচিভিত্তিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, চালকরা যেন নিজেদের মর্যাদা নিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলা বন্ধ করেন এবং কর্মসূচিভিত্তিক ঐক্য গড়ে একটি মডেল তৈরি করেন। মৌলিক দাবি পূরণ হলে পরে যার যার নিজস্ব সংগঠন গঠন করা যেতে পারে, তবে প্রাথমিকভাবে একটি যৌথ কাঠামো থাকা প্রয়োজন। তৃতীয়ত, সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার পর চালকদের প্রতি জনগণের নেতিবাচক মনোভাব ও দূরত্ব কমাতে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। এর জন্য জনসংযোগমূলক কিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়া দরকার। উদাহরণস্বরূপ, চালকরা অযথা হর্ন দেবেন না এমন স্টিকার ব্যবহার করতে পারেন। একইসঙ্গে জনগণের জন্য মোবাইল হাতে নিয়ে রাস্তা পার হবেন না এ ধরনের প্রচার চালাতে পারেন। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে চালকদের ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আলোচনা সভায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আমরা এমন একটি আইন চাই, যেখানে ড্রাইভারদের কর্মঘণ্টা, কর্মপরিবেশ, চাকরির নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা সুনির্দিষ্ট থাকবে। শ্রমসংস্কার আইনেও বলা হয়েছে, প্রত্যেক শ্রমজীবী মানুষের একটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড থাকতে হবে। এই কার্ড তার স্বীকৃতি-সে একজন শ্রমিক, একজন শ্রমজীবী মানুষ। এই শ্রমজীবী মানুষের রেশন, আবাসন ও পেনশনের নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, হালকা যানবাহনের জন্য আমাদের লাইসেন্স আছে, কিন্তু শ্রম আইনে হালকা চালকদের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেলাম হালকা যানের চালক হিসেবে, কিন্তু শ্রম আইনে তার স্বীকৃতি পেলাম না। কারণ, আমরা এতটাই ‘হালকা’ যে আইনেও আমাদের স্থান হয়নি। রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, শ্রম আইনের ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে-নিয়োগপত্র না দিয়ে কাউকে নিয়োগ করা যাবে না। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র হলো চাবি। কাল মালিক যদি বলেন, ‘কাল থেকে আর আসবেন না, চাবিটা দিয়ে যান’-তাহলেই শেষ। অথচ প্রত্যেক চালকের অভিজ্ঞতার একটা মূল্য আছে। বয়স যত বাড়ে, অভিজ্ঞতা বাড়ে; কিন্তু চাকরির ঝুঁকিও তত বাড়ে। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব বুলবুল।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
গাড়িচালকরা দেশের অন্যতম দক্ষ জনশক্তি-শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান
- আপলোড সময় : ২৪-১০-২০২৫ ১১:২৫:১৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৪-১০-২০২৫ ১১:২৫:১৪ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার